|
আমাদের রইস আলী আমাদের দুলেনারা
জলের স্বভাব হলো মন ভিজিয়ে তোলা। আর সে জলের তরল পাটাতনে যদি নামে শ্রাবণের ধারা, বশীভূত অন্তরও হয়ে পড়ে অস্থির। ইচ্ছে করে ছুঁয়ে দিতে রুপালি মেঘের কুচি। দলছুট মেঘের ঝরনার নিচে ভিজতে। বিছানো জলে গা ভাসিয়ে সাঁতার কাটতে। হঠাৎ আসা বৃষ্টিতে নাগরিক যান্ত্রিকতা, ইট-পাথরের ইমারত ডিঙিয়ে, বিষাক্ত ধুলোর আস্তর ছিঁড়েখুঁড়ে মন ছুটে যায় বালিকা দিনে। ধানমন্ডি লেকের পাশে ঝুলন্ত বারান্দায় বসা আমাকে ডাকে আমাদের রইস আলী, আমাদের দুলেনারা। এক গাঁটরি স্মৃতির বোঁচকাবুঁচকি নিয়ে সওয়ার হতে যাই শৈশবের ট্রেনে। ‘দিনগুলো মোর সোনার খাঁচায় রইল না’-এর রিংটোন টেনেহিঁচড়ে থামায় আমাকে। ১০ বছরের ছেলে মুহিত আসে—মা, তোমার ফোন। বিরক্ত হয়েও রিসিভ বাটন টিপি, কিন্তু ওপাশের গলা শুনে বিরক্তির ভাঁজ পুটপুট ছিঁড়ে গিয়ে অদম্য কৌতূহল তৈরি করে, লাদেন নিহত হয়েছে। পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদের বাড়িতে ২ মে গভীর রাতে যুক্তরাষ্ট্রের এক স্পেশাল কমান্ডো অ্যাসাইনমেন্টে নিরস্ত্র লাদেন মারা গেছে।
বারাক ওবামা, আমেরিকা লাদেন আর পাকিস্তানের যোগসাজশে তৈরি হট নিউজের উত্তাপে আমাদের রইস আলী আর দুলেনারা পিছু হটে। ওদের সারল্যমাখা অবয়বগুলো ভোরের শুকতারার মতো মিলিয়ে যায়। আট নম্বর ব্রিজের ওপর দিয়ে চলমান প্রাডো, এলিয়ন আর প্রিমিও গাড়ি ছোটে ৭০ কি ৬০ অথবা ৫০ কিলোমিটার স্পিডে। কোনো কোনো গাড়ির সিডি থেকে দ্রিম দ্রিম মিউজিকের শব্দ আছড়ে পড়ে আমাদের ঝুলবারান্দায়, টাইলসের মসৃণ সাদা রঙে। চুলোয় ভাত। বোরো, আমনখেতের ফসল এখন গ্যাসের চুলোয় টগবগিয়ে ‘ভাত’ হচ্ছে। ঘেমো পিঠে জল্লাদের মতো নামা বেদরদি রোদের তাপ সয়ে ফজলু অথবা ইদ্রিস মিয়ারা কি জানত সে কার জন্য ফসল বুনছে? ঢাকনা উঠিয়ে ভাতের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করি। নৃত্যরত সাদা চালগুলো জুঁই হয়ে ফুটে ভাত হলো কিনা দেখার জন্য কাঠের চামচ ডুবাই হাঁড়িতে। এখানেও জল। ঘন সাদাটে। আর রুখে কে! একটা সোমেস্বরী নদী হুড়মুড় করে আট নম্বর ব্রিজ টপকে, ধানমন্ডি লেক উপচে আমার পনেরো শ স্কয়ার ফিটের ফ্ল্যাটে ঢুকে পড়ে। একটা কাঠের ডিঙায় চড়ে আমাদের রইস আলী আর দুলেনা এসে ভেড়ে বারান্দায়।
আমরা আয়া পড়ছি গো রুবী
তুমি ত আমরারে ভুইল্লাই গেছো...
শৈশবের খেলার সাথিরা অভিমানে গাল, ঠোঁট ফোলায়। দেয়াল ঘড়ি সুরেলা অ্যালার্ম বাজায়—একে একে সাতটা। আঁতকে উঠি। আটটায় অফিস। ছেলেকে স্কুলে নামানো। ডাবলিনে ডোনারদের জরুরি ই-মেইল করা। বললেই হলো—আমরা আয়া পড়ছি...। রইস আলীর দিকে তাকাই—হায় আল্লা, একটা ঢলঢলে হাফপ্যান্ট পরা, স্রেফ উদোম গা, পাভর্তি ধুলো। বিরক্ত হই। বুয়া বলাকওয়া ছাড়া তিন দিন ধরে আসছে না। কত কষ্টে ঘর মোছা। দুলেনার হাতে পুতুলের বাক্স আর কয়টা খেলনা হাঁড়িপাতিল। এত কিছু সামলাতে গিয়ে বুকে ঠেসে ধরেছে জিনিসগুলো। কিন্তু নাক বেয়ে নেমে আসা সর্দি, তা মোছে কীভাবে? আমি চেঁচিয়ে উঠি এসব কি—জলদি নাক সাফ কর দুলেনা। আমার রূঢ়তায় ওর মুখটা ম্লান হয় একটু। ইন্টারকম বেজে ওঠে পাখির স্বরে—এই রে, নিশ্চয় ড্রাইভার রিমাইন্ডার দিচ্ছে বের হতে দেরি হবে কিনা...। স্কুল ড্রেসে ছেলে এসে দাঁড়ায়—মা, আমি রেডি। তুমি তো এখনো চেঞ্জও হওনি। আমার এই ব্যস্ততা টের পেয়ে রইস আলী আর দুলেনারা আবার কিস্তি নৌকায় উঠে বসে। মনমরা মুখে রইস বৈঠা মারে। বারান্দায় চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে দেখি, ওদের নিয়ে নাওটা ক্রমেই দূরে হারিয়ে যাচ্ছে। ছেলের খাবার টিফিনবক্সে ভরলেও নিজের লাঞ্চ নেওয়ার সময় আর হয় না।
স্টাফ মিটিং। আজকের মিটিং মিনিটস তৈরির দায়িত্ব আমার। একটা পয়েন্টও যাতে মিস না হয়, সে জন্য শিকারি বকের মতো চোখ আর কান পেতে রাখি। আজকের এজেন্ডা ‘বাংলাদেশের শিশু ও নারী পাচার’।
বাংলাদেশে প্রতিবছর শিশু ও নারী পাচার হয় ১৫ হাজার। ১৯৯০-১৯৯৭ সালে প্রায় দুই লাখ নারী ও ছয় হাজার শিশু পাচার হয়েছে। এ তথ্য জানা যায় সেন্টার ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন স্টাডি মে ১৯৯৮ রিপোর্ট অনুসারে। শিশু ও নারী পাচারের প্রধান রুট হিসেবে বাংলাদেশ ও নেপাল ব্যবহূত হয়ে আসছে।
’৭৯-৮৯ এই ১০ বছরে আনুমানিক দুই লাখ কিশোরী বিভিন্ন পতিতালয়ে বিক্রি হয়েছে এবং এই পতিতালয়গুলো পাকিস্তান, ইন্ডিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে। প্রতিদিন বাংলাদেশের স্থল সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে ৫০ জন শিশু ও নারী পাচার হচ্ছে।
টি-ব্রেকের জন্য ১৫ মিনিট বরাদ্দ হলে প্যাসিফিক সমুদ্র থেকে সমাহিত লাদেন ফিরে আসে আমাদের চায়ের কাপে। লাদেন হত্যা মিশনের নায়ক বাপের বেটা বারাক ওবামা সে-ও বাদ থাকে না। আসে আসিফ আলী জারদারিও। অ্যাবোটাবাদের সেনা ছাউনির নাকের ডগায় কী করে লাদেন এত দিন বসবাস করে আসছিল? পাকিস্তানের বাঘা ইন্টেলিজেন্ট ব্রাঞ্চ কি ফিডারে দুধ খাচ্ছিল? আর মাঝরাতের সুনসান নীরবতায় লাদেনের বাড়ির কার্নিশে কমান্ডো বাহিনীর প্রথম বিমানটি যখন গোত্তা খেয়ে বিকল হলো, তখনো কি আওয়াজ-টাওয়াজ লাদেনের চৌকস নিরাপত্তাকর্মীদের কানের ফুটোয় ঢোকেনি? লাদেনের মতো ফুলটাইম ফাইটার কীভাবে নিরস্ত্র হাতে ঘুঘুর মতো টপাটপ গুলি খেয়ে মরে যায়। একজন মহিলা সহকর্মীর ফিশ ফিশ মন্তব্য আমার কানের ফুটোয় উপুড় করে দেয়। লাদেন, ওবামা কিংবা জারদারির মতো ইয়া ইয়া ব্যক্তিত্বগুলো গুরুত্ব হারিয়ে আমার মাথায় গিজ গিজ করে মিটিংয়ে পাওয়া ওমেন অ্যান্ড চিলড্রেন ট্রাফিকিংয়ের ভয়াবহ চিত্র।
’৯৭ সালের ‘ট্রাফিকিং ওয়াচ’ সংস্থার দেওয়া তথ্যমতে, বাংলাদেশের ১০ হাজার শিশু ভারতের মুম্বাই এবং গোয়া পতিতালয়ে আছে। এরা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী দিনাজপুর, কক্সবাজার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা দিয়ে মূলত পাচার হচ্ছে। উটের জকি হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে পাচার হওয়া নিরীহ ভাগ্যহীন শিশুদের রক্তশূন্য মুখগুলো আমার চোখের আওতায় ক্রমাগত আর্তনাদ করে ওঠে। সুপারসনিক বিমানের ক্ষিপ্রতা অতিক্রম করে, ধুলোর টর্নেডো তৈরি করা লম্বা গলা কুঁজওয়ালা উটের দৌড়ে ব্যবহূত জকি বাবলু, সুরুজ আলি, কদমদের ভয় পাওয়া বিবশ চিৎকার আসে কানে। অ্যাটেনশন প্লিজ। ধূমায়িত চায়ের কাপ খালি এখন। সমুচা আর বিস্কুটের গুঁড়ো পড়ে থাকা প্লেটগুলোও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আজকের মিটিংয়ে চেয়ারপারসন কান্ট্রিডিরেক্টর ওরলা মার্টিন সবার মনোযোগ আকর্ষণ করে। মিটিং শুরু হওয়া মাত্র রাইটিং প্যাডে আমার আঙুল কর্মতৎপর হয়ে ওঠে। এক্সকিউজ মি—বিরতির এক ফাঁকে সোয়ানা স্টলওয়ার্দি আমার দিকে তাকায়—নিচু স্বরে বলে, আমি আজ রাতের ফ্লাইটে চিটাগাং যাচ্ছি। তুমি কাইন্ডলি মিটিং মিনিটসটা আমার মেইল অ্যাড্রেসে থ্রো করো প্লিজ। একটু থেমে বলে, একচুয়েলি জাস্ট নাউ আ’ম লিভিং দ্য মিটিং। বিকস আ’হেভ অ্যানাদার শিডিউল। ঘড়ির দিকে তাকায় সোয়ান। তারপর নিঃশব্দে ব্যাক ডোরে বেরিয়ে যায়। শুধু যাওয়ার আগে ওরলার সঙ্গে একঝলক দৃষ্টি বিনিময় করে। ওর এই প্রোগ্রাম আগে থেকেই হয়তো সেটআপ করা। মিটিংয়ে আর একটুও টোকা না দিয়ে ও চলে যায়।
পাঁচটায় মিটিং শেষ হলে মাথা ভার ভার লাগে। এখনই এক কাপ কড়া ব্ল্যাক কফি গিলতে হবে। তার আগে একটা ডিসপ্রিন। শুধু ভার ভার নয়, মাথাটা ঢিপঢিপ ব্যথাও করছে। আমিই বা কতটুকু স্বস্তিতে আছি। ঘর গেরস্থালি, সন্তান, যানজটের গেরো খুলে খুলে ধানমন্ডি থেকে উত্তরায় আসা! এর মধ্যে আবার বোকাসোকা ইনোসেন্ট বালিকাবেলার জন্য ‘মন কেমন করে ওঠা’র শৌখিন আহা উহু। খেলার সাথি রইস আলী দুলেনাদের দৌরাত্ম্য!
অফিসের স্টাফ বাসে উঠে বসি। ছেলে স্কুল থেকে বাসায় ফেরে না। খালি বাসায় বেচারা কার কাছে থাকে। স্কুলে ছুটির পর ভাইয়ের ছেলের সঙ্গে একসঙ্গে চলে যায় ওদের সোবাহানবাগের বাসায়। মামার বাসা হলেই কী। রোজ রোজের ব্যাপার। আমি তাই মুহিতকে ভালো করে টিফিন দিয়ে দিই, যাতে লাঞ্চও কাভার করে। অফিসের বাস রোজ আমাকে সংসদ ভবনের গোলচত্বরে নামায়। ওখান থেকেই গাড়ি এসে আমাকে পিক করে। বাসের সিটে হেলান দিয়ে আরাম করে বসি। হাত-পাগুলো খুলে খুলে যাবে যেন। বড় ক্লান্ত লাগে। তাড়াহুড়োয় লাঞ্চও আনিনি। স্রেফ একটা বার্গার কামড়িয়ে অভ্যেসি খিদেকে বশ করেছি। লাঞ্চে এসব বার্গার-ফার্গার অসহ্য লাগে। একটু সাদা ভাত তার সঙ্গে ডালভর্তা একটা হলেই হলো। তবে ভাতটা চাই। একেবারে ভেতো বাঙালি। শৈশবে হাঁড়িপাতিল খেলার সংসারে রইস আলী হতো আমার বর, দুলেনা কখনো শাশুড়ি, কখনো সতিন। আমার দাদার সে সময়ই চারটা বিয়ে। ঘরে তখনো দুই দাদিই বর্তমান। চাচা, জ্যাঠাদেরও কারও কারও দুই বউ। ‘সতিন’ শব্দটা তাই শৈশবেই পরিচিত আমাদের। তবে সতিন হলেও দুলেনা কখনো ঝগড়াটে পাজি সতিন হতো না। বরং বুবু দেও, তুমারে মরিচটা বাইট্টা দেই, তুমার কোমর বিষ...। আর রইস শয়তানটা জামাই হওয়ার দাপটে ঘরে ফিরেই—কই লো আমার খড়ম কই, আমার ওজুর পানি কই বলে হাতের হ্যালেঞ্চার ডাল দিয়ে সত্যি সত্যি আমাদের দুজনকে মার লাগাত। নারী নির্যাতনের ‘সবক’ তো আমাদের ছেলেরা জন্মের পর তাদের সংসারের ‘পাঠশালা’ থেকেই শিখে বসে থাকে। আমাদের বহন করা স্টাফ বাস বারিধারার যানজটে গেঁথে পড়ে। গার্মেন্টস ছুটি হয়েছে। উঁচু উঁচু ভবন থেকে বানের পানির মতো অগণিত কালো কালো মাথা বেরোচ্ছে। যেন পাহাড়ি ঢল। দেখার মতো দৃশ্য। হঠাৎ অপ্রাসঙ্গিকভাবেই মনে হয়—এই মানবঢলে কি আমাদের রইস আলী অথবা দুলেনারা আছে? দাদাজান মারা যাওয়ার পর ঈদ পর্বে কিংবা শীত, গ্রীষ্মের বন্ধে গ্রামে যাওয়া ক্রমেই অনিয়মিত হয়ে ওঠে আমাদের। সম্ভবত ম্যাট্রিক পাস করার পর আর যাওয়া হয়নি।
বনানী-কাকলী পার হওয়ার সময় ব্যাগের ভেতর অনেকক্ষণ শান্ত হয়ে থাকা মোবাইলটা দায়িত্ব পালনে সক্রিয় হয়ে ওঠে। রিসিভ বাটন টেপার সঙ্গে সঙ্গেই ইশতিয়াকের গলা—কদ্দুর?
বনানী-কাকলী
মাত্র? আমি আর্লি চলে এসেছি, কিন্তু কপালে বউয়ের হাতের চা নেই।
নিজেই করে নাও না।
দূর, সারা দিন অফিস করে এখন চা বানাব?
মেজাজ খারাপ হলেও বিষয়টা নিয়ে ভাবতে চাই না। বরং বাসের জানালায় চোখ রাখি। যে জানালাটা জাদুকরের মতো একের পর এক দৃশ্য পাল্টাতে চৌকস।
হুড তোলা রিকশায় প্রেমিক-প্রেমিকার সুখী অবয়ব।
শপিংমলে খামাকা ঢুঁ মারতে আসা বিত্তবান মোটাতাজা গৃহিণীদের থলথলে হাঁটা।
বেলুন হাতে ঝলমলে শিশুর গাল উপচানো হাসি।
সংসদ ভবনের গোল চত্বরে বাস থামলে ঝটপট নামি। কিছু দূরেই আমার জন্য অপেক্ষমাণ সিলভার এক্স করোলা দেখে প্রীত হয়ে উঠি—যা হোক এখানে অন্তত অপেক্ষা করতে হবে না।
ইন্টারকমেই ভাবিকে বলি—মুহিতকে পাঠিয়ে দাও। আজ আর উঠব না। খুব ক্লান্ত, সাহেবও বাসায় চলে এসেছে। মুহিত গাড়িতে উঠে খুব খুশি—বাবা আজ তাড়াতাড়ি চলে এসেছে? খুব মজা হবে, বাসায় গিয়ে রেসলিং দেখব।
জনসিনা, বিগ শো, মার্ক হেনরি, সিএম পাঙ্ক যা লড়ে না!
মন খুব বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে ভাবি—ছেলেগুলো কি মারামারি ছাড়া কিচ্ছু বোঝে না? তবু ক্ষোভ অক্ষত রেখে ছেলেকে আদর করি—বাবুসোনাটা মামার বাসায় লক্ষ্মী হয়ে ছিলে তো? মামিকে ডিস্টার্ব করোনি তো?
টিফিন সব খেয়েছ তো? মুহিত পর্যায়ক্রমে উত্তর দিয়ে যায়—হ্যাঁ, না, হ্যাঁ। বাসায় ঢুকে আর কোনো দুষ্টুমিকে প্রশ্রয় দিই না। ভাবিকে বলেছি, ‘সাহেব’ বাসায় এসেছে। সাহেব কথাটার আড়ালের ক্ষোভটা ভাবি বোঝেনি। বাসায় ফিরেই রান্নাঘরে ঢুকতে হবে। বৈকালিক চা-নাশতা বানাতে। তারপর রাতের খাবার তৈরি ছাড়াও সবার জন্য আগামীকালের লাঞ্চ। কখন ছুটি হবে আমার? সংসদ চত্বরে মনোরম বিকেল, সবুজ বৃক্ষরাজিও আজ আমার মেজাজ নমনীয় করতে পারে না। কী জীবন বহন করে চলছি? বিজয় সরণির মোড়ে আবার জ্যামে পড়ি। পপকর্ন নিবেন ভাইয়া? পিয়াল জানালার কাচ নামায়—মা, পপকর্ন কিনে দাও। সারা দিন পর সন্তানের এই আবদার বিরক্তি ঢেলে নষ্ট না করে পার্স খুলে টাকা বের করি। বিক্রেতা আট-নয় বছরের একটা মেয়েশিশু। জিজ্ঞেস করি—কী নাম তোমার? ‘দুলেনা’ মেয়েটার মায়াবী চোখ দুটো হেসে ওঠে। চমকে উঠি আমি। দুর্বল হয়ে ওঠে মন। ওকে আরও পাঁচটি টাকা বাড়িয়ে দিই। টাকাটা হাতে নিতে নিতে প্রশ্রয় পাওয়া উচ্ছ্বাসে দূরে দাঁড়ানো একটা ছেলের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে অপ্রাসঙ্গিক বলে—ওই আমার ভাই, রইস আলী। বোকা বোকা মুখ করে এদিকেই তাকিয়ে ছেলেটা। জ্যাম খুলে যেতেই গাড়ি আবার চলতে শুরু করে। পেছনে পড়ে থাকে আমাদের রইস আলী, আমাদের দুলেনারা। |
|