শ্রাবণের আকাশে বিশ্বাস নেই। বৃষ্টি নামে যখন-তখন। ঢাল ধরে কাশেমপুরে পৌঁছাতে দিনটা হেলে পড়ে। কাঁচা সড়কপথে হাটখোলার মানুষচলা পথেই আবার নদীতে উঠে আসা। দপদপিয়া পেরোলেই তো জলঢাকা। লতাবেড়ি দিয়ে প্যাঁচানো বিলপাড়ে ঘরগুলো সব উঁচু। পাড়ে নোঙর বাঁধা। মলিনাহাটের মানুষ বলে, এখানে রাজার বাড়ি ছিল। বসত জায়গাটা আর নেই। জমিজমা, ঘাটপাট, রাজাপ্রজা, জলমাটি, নৌকা ভেড়ানো নদীপাড়। শ্রাবণ-ভাদ্রে জল না পাওয়ায় পলি পড়ে বাকেরগঞ্জ ফরিদপুর হয়েছে, আর ওদিকে আড়িয়াল খাঁ হয়েছে শায়েস্তাবাজার। বৃষ্টিতে বানের জলে সেসব তো শুধু অন্ধকার ঘন স্যাঁতসেঁতে চলতা পড়া বলেশ্বরের স্থলভূমি। অববাহিকার খাঁড়িতে, বাবুবাজার ঘাটে রাহেলারা, চন্দনারা বসে আছে লঞ্চের গলুইয়ের ডগায়। চন্দনারা প্রতীক্ষা করছে আর ভিড়টা কোন দিকে গড়াচ্ছে তা দেখছে। কাল রাত থেকে যাত্রীরা এখানে আসছে। পরেশ, আলী মিঞা, জান্নার বাপের প্রতিদিনের আসা-যাওয়া। এই তল্লাটে ব্যস্ত নিবারণ চরণ, বলাইরা ডাঙা আর জলের কর্মকাণ্ড দেখে। ঘটিবাটি বিক্রি করে দিয়েছে শানুরা। রাহেলারা বলে, এখানে তারা বিচ্ছিন্ন। সমাজ নেই। জলঢাকায়, মলিনাহাটে চন্দনাদেরও সমাজ ছিল। মলিনাহাটে কাঁটামনসার, ময়নাকাঁটার বেড়া দিয়ে ঘেরা উনুন ছিল। বাষ্প ছিল। সেই ফুটন্ত ভাতের গন্ধটা স্টিমারঘাট পর্যন্ত বাতাসে ভাসে। |